হ্যাঁ, আপনি ঠিক পড়ছেন। ইতিহাসের বইয়ের ভাঁজে এই কাহিনিগুলো সচরাচর খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ, এই নিষিদ্ধ অধ্যায়গুলোই হয়তো বদলে দিয়েছিল দিল্লির মসনদের চালচিত্র। ইসলামিক দুনিয়ায় সমকামিতা যেখানে মৃত্যুদণ্ডনীয় অপরাধ, সেখানে দিল্লির অনেক সুলতানের কাছেই তা ছিল এক অজানা নেশা। ঠিক সমকামিতা নয় হয়তো, আরও ঘোরতর কিছু। এক ধরনের বিকৃতি, যা ভোঁতা করে দিয়েছিল তাদের সংবেদী অঙ্গকে। এই বিকৃতিই হয়তো মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাসকে এক অন্য পথে চালিত করেছিল।
সুলতানরা শুধু নারী নয়, পুরুষ দাসও রাখতেন। এ যেন ছিল তাদের এক পবিত্র অধিকার। ভারতের তথাকথিত সোনালি ইসলামিক শাসনকাল দাসত্বের শেকড়কে আরও মজবুত করেছিল। সুলতানদের দরবারে নারী ও পুরুষ যৌন দাসদের সংখ্যা নাকি সমান রাখা হতো। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এই পুরুষ দাসদের বলা হতো 'গিলমান'। এদের নাকি নীল চোখ, নরম ত্বক আর মোহনীয় চেহারা থাকত।
এই নীল চোখের 'গিলমান' আর সুলতানদের নিয়ে কিছু অবিশ্বাস্য প্রেমের কাহিনি প্রচলিত আছে।
সুলতান মাহমুদ গজনভি। হ্যাঁ, সেই মন্দির ভাঙা গজনভি। তার মন্ত্রী আবুল আব্বাস ফজল বিন আহমেদ-এর বাড়িতে তিনি নাকি তছনছ চালিয়েছিলেন। কারণ? মন্ত্রী নাকি এক দাঁড়ি-গোঁফ ওঠেনি এমন ছেলেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন, যার রূপ ভেনাসের মতো। খোন্দামির তার 'দাস্তারুল উজরা' গ্রন্থে এমনই লিখেছেন। মন্ত্রীকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন সুলতান। জিজ্ঞেস করেছিলেন ছেলেটির কথা। মন্ত্রী অস্বীকার করলে মন্ত্রিত্ব তো গিয়েছিলই, বাড়িও নাকি গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন সুলতান। এমন তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল তার দাঁড়ি-গোঁফবিহীন ছেলেদের প্রতি।
আলাউদ্দিন খিলজি গুজরাট দখল করেছিলেন। সেখানকার রাজা কর্ণ সিংয়ের স্ত্রী রানি কমলা দেবীকে বন্দি করেছিলেন। রানির সাথে বন্দি হয়েছিল এক কিশোরও। তার নাম কাফুর হাজার দিনারি। সে ছিল প্রাক্তন হিন্দু দাস, যাকে হাজার দিনার দিয়ে কেনা হয়েছিল। খিলজি নাকি এদের দু’জনকেই 'ভালোবাসতেন' - তবে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। কমলা দেবীকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেছিলেন আলাউদ্দিন। আর কাফুর হাজার দিনারির জন্য তিনি নাকি এক পবিত্র জুনার (পোশাক) ধারণ করেছিলেন ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে। সঞ্জয় লীলা বনসালি যদি আলাউদ্দিন আর রানি পদ্মিনীর তথাকথিত ‘প্রেম’ (কাফির নারীদের প্রতি ইসলামিক ধর্ষণের কল্পনা) নিয়ে ছবি বানাতে পারেন, তাহলে এই ত্রিকোণ প্রেম নিয়েও হয়তো একদিন ছবি হবে।
কাফুর হাজার দিনারি ওরফে মালিক কাফুরকে সুলতানের নায়েবে সালতানাত বানানো হয়েছিল। তাকে 'ভালোবাসার' জন্য যথেষ্ট নরম রাখতে নাকি খোজাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যাতে সে কখনও পুরোদস্তুর পুরুষ না হতে পারে। এর নাকি বেশ কিছু সুবিধা ছিল:
• সুলতান নিশ্চিত করতেন যে তার যৌন দাসরা শুধু তারই দ্বারা ব্যবহৃত হবে, অন্য পুরুষ দাসদের স্পর্শ থেকে তারা সুরক্ষিত থাকবে।
• খোজারা রাজকীয় পতিতালয়ের ব্যবস্থাপক হতে পারত।
• খোজা হওয়ার কারণে তারা নাকি সারাজীবন নরম আর নিষ্পাপ থাকত, কখনও বাড়ন্ত হতো না।
• এই খোজারা নাকি সেনাবাহিনী, রাজকীয় পতিতালয় বা মন্ত্রিত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও পেত। কারণ এই যৌনাচার প্রভাবিত রাজতন্ত্রে তারা নাকি যৌনভাবে নিষ্ক্রিয় বা অপ্রভাবিত থাকত।
সুলতান মুবারক খিলজি ছিলেন আরেকজন প্রেমী পাখি। তারও নাকি দাঁড়ি-গোঁফবিহীন ছেলেদের প্রতি তীব্র আসক্তি ছিল। খুসরু খান নামের এক গিলমানের (নীল চোখের ছেলে) প্রতি তিনি নাকি পাগল ছিলেন।
খুসরু সুলতানের জন্য যেন এক অনুগত ইসলামিক স্ত্রীর মতো ছিল। বিছানায় এবং বাইরে দু'জায়গাতেই সে সুলতানকে সঙ্গ দিত। তাকে সেনাবাহিনীর জেনারেলও বানিয়েছিলেন সুলতান। দাক্ষিণাত্য অভিযানে সে সুলতানের বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
কিন্তু এই প্রেম কাহিনির শেষটা হয়েছিল মর্মান্তিক। খুসরু যখন সুলতানের বিশ্বাস অর্জন করে ফেলল, এক রাতে দু’জন যখন একে অপরের বাহুতে ছিল, ঠিক তখনই নাকি সুলতানের অঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছিল। কে কেটেছিল? সেই হাত, যা আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল! খুসরু নাকি সুলতানের তলপেটে ছোরা বসিয়ে তাকে হত্যা করেছিল এবং নিজেই সুলতান হয়েছিল।
সুলতান সিকান্দার লোদিও নাকি হারেমে নীল চোখের ছেলেদের পছন্দ করতেন। তার নাকি বৈচিত্র্য ভালো লাগত। প্রতি রাতে তার আকাঙ্ক্ষা নতুন মুখের খোঁজ করত। দিনের বেলায় তিনি ছিলেন ইসলামিক গাজী, যারা কাফির মূর্তি পূজারিদের হত্যা করে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতেন। আর রাতে? রাতে নাকি তিনি ছেলে আর মেয়েদের নিয়ে মেতে উঠতেন, ঠিক যেন ইসলামিক বেহেশতের প্রতিশ্রুতির মতো। উপভোগ করতেন দলবদ্ধ যৌনাচার।
ছেলে যৌন দাসদের সাথে সুলতানদের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা অন্যদের ঈর্ষার কারণ হতো। পুরুষ যৌন দাসদের মধ্যেই শত্রুতা তৈরি হতো। যখনই কোনো সুলতান মারা যেতেন, তার অনুগত প্রেমিকদের নতুন সুলতান হত্যা করত। ঘুরি থেকে বাবর, আকবর থেকে আওরঙ্গজেব, বাহাদুর শাহ পর্যন্ত এই নীল চোখের ছেলেদের রক্তপাত চলতেই ছিল।
ফিরিস্তা বর্ণনা করেছেন কীভাবে মুহাম্মাদ বিন তুঘলক ফিরোজ শাহ তুঘলকের ছেলে দাসদের তিন দিনের মধ্যে রাজ্য ছাড়ার অথবা মৃত্যুর হুমকি দিয়েছিলেন। রাতের বেলার ফ্যান্টাসি পূরণের জন্য নাকি শুধু কয়েকজনকে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
বারানীর মতে, এটা আল্লাহর আশীর্বাদ ছিল যে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক দাঁড়ি-গোঁফবিহীন ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন না। তবে তার ছেলে মুহাম্মাদ বিন তুঘলক যখন ছেলে আসক্ত হলেন, তখন তিনি হতাশ হয়েছিলেন। ইবনে বতুতার মতে, এর ফলে পিতা-পুত্রের মধ্যে নাকি বিবাদও হয়েছিল।
সুলতানদের মধ্যে ছেলেদের প্রতি ভালোবাসা এতটাই ব্যাপক ছিল যে তাদের অনেকেই নাকি এর জন্য আলাদা বিভাগ খুলে রেখেছিলেন।
গুরুত্বপূর্ণ পদে খোজা নিয়োগের প্রতিও সুলতানদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। রক্ষী থেকে শুরু করে উজির পর্যন্ত নানা পদে খোজা দেখা যেত। এই খোজারা ছিল সেই পুরুষ, যাদের সুলতান ভোগ করার আগে খোজাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
অন্যভাবে বলতে গেলে, অল্পবয়সী ছেলেদের খোজা করার মতো নৃশংস প্রথাকে প্রকাশ্যে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। এই ছেলেরা একজন ব্যক্তির কামনা বাসনার শিকার হতো এবং কোনো দোষ ছাড়াই তাদের হত্যা করা হতো। অথচ আমাদের উদার ঐতিহাসিকরা এই হানাদারদেরই যুক্তিবাদী শাসক বলে মনে করেন!
সুতরাং সুলতানরা নানা রকমের যৌনাচার উপভোগ করতেন – বিভিন্ন প্রকারভেদ আর সংমিশ্রণে।
• অমুসলিম মেয়ে ও মহিলাদের অপহরণ ও ধর্ষণ
• অল্পবয়সী ছেলেদের সাথে সেডমি
• প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ যাদের বেশিরভাগই ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হতো (হত্যা করা হতো)
• খোজারা যারা সবচেয়ে বিশ্বস্ত যৌনসঙ্গী হতে পারত
• এবং অবশ্যই অসংখ্য স্ত্রীকে নিয়ে অস্থায়ী বিয়ে (মিসইয়ার এবং মুতাহ)
পরের বার যখন কেউ ইসলামিক শাসনের সোনালি যুগ নিয়ে গর্ব করবে, তখন তাকে জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না এই বিকৃত সুলতানদের সমকামিতা, ধর্ষণ আর পেডোফিলিয়ার কীর্তিগুলো নিয়েও গর্ব করতে পারে কিনা।